সুনামগঞ্জ , শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫ , ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যৌথবাহিনীর অভিযানে রিভলবার উদ্ধার একটি পাথর সরালে জীবন ঝালাপালা করে দেব : ডিসি সারওয়ার আলম সীমান্তে ভারতীয় মোটরসাইকেল জব্দ মধ্যবাজারে ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী আহত চারটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স অকেজো একদিনও সেবা পায়নি চার উপজেলার মানুষ সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক : ভেস্তে গেছে চার লেন প্রকল্প জামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন ইরা-সিআরইএ প্রকল্পের ‘অভিযোজন এক্সপো’ সম্পন্ন কাজের খোঁজে গ্রামাঞ্চলের দিনমজুররা শহরমুখী প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই শিল্পপণ্য মেলার আয়োজন! লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যেন ডোবা-নালা তাহিরপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০ র‌্যাবের অভিযানে ভারতীয় ২৭২ বোতল মদ জব্দ যারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে তারা দেশের শত্রু : কয়ছর এম আহমদ প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে গায়েব জেলার বহু খাল নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত : কয়ছর এম আহমদ বিশ্বম্ভরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত শান্তিগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০ দেশ যেন মৌলবাদের অভয়ারণ্য না হয় : তারেক রহমান সত্যশব্দের বর্ষার আয়োজন ‘বাদল গেছে টুটি’

ফসলরক্ষা বাঁধের জন্য কাটা হচ্ছে টাঙ্গুয়ার মাটি, উজাড় হচ্ছে কান্দা, ধ্বংস হচ্ছে বাস্তুসংস্থান

  • আপলোড সময় : ০৯-০৩-২০২৫ ১২:৩৪:২৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৩-২০২৫ ১২:৫৯:৪৬ পূর্বাহ্ন
ফসলরক্ষা বাঁধের জন্য কাটা হচ্ছে টাঙ্গুয়ার মাটি, উজাড় হচ্ছে কান্দা, ধ্বংস হচ্ছে বাস্তুসংস্থান
শামস শামীমটাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে এসে ::

আন্তর্জাতিক রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরকে ছয়কুড়ি কান্দার হাওর বলা হয়। প্রতিটি জলাশয় ঘিরে রয়েছে শতাধিক কান্দা। এসব কান্দা স্থলজ-জলজ বাস্তুসংস্থান হিসেবে গড়ে ওঠেছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু গত ৮ বছরের ব্যবধানে এসব কান্দা চোখের সামনে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। কাবিটা নীতিমালায় ২০১৮ সাল থেকে এসব কান্দা কেটে ফসলরক্ষা বাঁধে মাটি ফেলায় কান্দার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)-এর ‘বায়োডাইভারসিটি অফ টাঙ্গুয়ার হাওর : এ রামসার সাইট অব বাংলাদেশ’ দ্বিতীয় ভলিয়মে টাঙ্গুয়ার হাওরে ১৮০টি কান্দার উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোকে হাওর জলাভূমির উদ্ভিদ, মিঠাপানির মাছ এবং জলাভূমি সংশ্লিষ্ট বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জীববৈচিত্র্যের কারণে এখনো টাঙ্গুয়ার হাওরকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘গুরুত্বপূর্ণ’ জলাভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই রিপোর্টে হাওর অববাহিকা ও বসতভিটার মধ্যবর্তী উঁচু স্থানকে কান্দা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে সবগুলো কান্দাই সরকারি খাস ভূমি। ওই রিপোর্টে লেছুয়ামারা, রূপাবই, রৌয়া, বল্লারডুবি, তেকুইন্না, আনার কান্দা, হাতিরগাতা, বেরবেরিয়া কান্দাকে প্রধান কান্দা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে হাওরটিতে গিয়ে দেখা যায়, পাটলাই নদীর দক্ষিণ তীরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। ৬নং পিআইসি থেকে ১৫ নং পিআইসি পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় পড়েছে। যদিও গুরমার হাওর বাঁচানোর জন্য ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এবার এই প্রকল্পগুলোতে প্রায় ৭৫ লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো অনেকটা ভালো থাকায় বরাদ্দ কম দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্য বছর এই প্রকল্পগুলোতে দ্বিগুণ ব্যয় হতো। কিন্তু এবার অক্ষত প্রকল্পের কারণে বরাদ্দ অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে কাউজ্যাউরি কান্দা কেটে বাঁধে মাটি দেওয়ার চিত্র লক্ষ করা গেছে। এই অংশের পাশাপাশি মধ্যনগর উপজেলার অংশেও কান্দা কেটে বাঁধে মাটি দেওয়া হচ্ছে। তবে ৬-১৫নং পিআইসির কি পরিমাণ মাটি বাঁধে ব্যবহার হচ্ছে সাময়িক পরিসংখ্যান পেলেও এই হাওরের অন্য কান্দার মাটির সেই পরিমাণ জানা যায়নি।
তাহিরপুর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবস্টেশন অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকেই উক্ত প্রকল্পগুলোতে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার ফুট মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। চলতি বছর আরো ২১ লাখ ৫০ হাজার ফুট মাটি ফসলরক্ষা বাঁধে ব্যবহার হয়েছে। এই মাটি হাওরের কান্দা থেকেই এস্কেভেটরে কেটে উত্তোলন করা হয়েছে। যা বর্ষায় হাওরের জলাশয়ে, নদীতে-খালে গিয়ে ভরাটে ভূমিকা রাখছে।
পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন কৃষকের জমি থেকে এবং কান্দা থেকে মাটি কাটার কথা স্বীকার করলেও সরেজমিনে দেখা গেছে, ৯৫ ভাগ মাটি কান্দা থেকে নেওয়া হয়েছে। এস্কেভেটরে মাটি কেটে কান্দা উজাড় করে কোথাও খাল তৈরি হয়েছে, কোথাও জমি তৈরি করেছেন পিআইসি’র প্রভাবশালীরা। সেই জমির দখল নিয়ে অনেকে চাষও করছেন। সরকারি জমির মালিকানা নিয়েছেন তারা। সরেজমিনে ভবানীপুর থেকে শ্রীলাইন তাহিরপুর পর্যন্ত একাধিক কান্দা কেটে ফসলরক্ষা বাঁধ তৈরির চিত্র লক্ষ করা গেছে।
পরিবেশবিদরা জানান, কান্দায় কেবল মাটিই নয়, মূল্যবান পোকামাকড়, বৃক্ষের বাস্তুসংস্থান রয়েছে। মাটি কাটার ফলে নির্বিচারে এই জীববৈচিত্রও বিনষ্ট হয়েছে।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী আহমদ কবীর বলেন, গুরমার হাওর রক্ষায় যে বাঁধ নির্মাণ করা হয় তার মাটি কাটা হয় টাঙ্গুয়ার বিভিন্ন কান্দা থেকে। এভাবে প্রতি বছর উজাড় হয়ে যাচ্ছে কান্দাগুলো। এতে কান্দার উপর বাস্তুসংস্থান গড়ে ওঠা জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে।
টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রতিবেশ প্রকল্পে দায়িত্বরত সাবেক পরিবেশকর্মী শাহ কামাল বলেন, নদীর নাব্যতা কমে পলিমিশ্রিত পানি হাওরে প্রবেশ করে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে হাওরের ভৌগোলিক অবস্থা ও প্রতিবেশ বিবেচনায় না নিয়ে বাঁধ নির্মাণও এই ক্ষতির কারণ। এসব কারণে হাওরের জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন। হাওরের ফসলরক্ষার জন্য বাঁধের মাটিতে জাঙ্গাল উজাড় হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, ফসলরক্ষার প্রয়োজনে হাওরের কান্দা থেকে কিছু মাটি নেওয়া হয়। যদিও নীতিমালা অনুযায়ী টাঙ্গুয়ার হাওরে এমন কিছু করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ মামুন হাওলাদার বলেন, বিভিন্ন হাওরের কান্দা বা সরকারি পতিত ভূমি থেকে ফসলরক্ষা বাঁধের মাটি নেওয়া হয়। শুধু কান্দা থেকে কেটে নেওয়া মাটিই নয় বাঁধের মাটি নিম্নভূমি ভরাটের প্রধান কারণ।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
মধ্যবাজারে ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী আহত

মধ্যবাজারে ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী আহত